রাকিব রিফাত,ইবি প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ঈদ-উল- আযহার ছুটিতে একটি কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষার্থী। কক্ষের পেছন দিকের গ্রিলের রড কেটে চোর ভিতরে ঢুকে এ ঘটনা ঘটায়। এতে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যের একটি ডেক্সটপ চুরি হয়েছে। একইসাথে চোর তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রুমমেটের ম্যাগনিফাইং ডিভাইস ভেঙে নষ্ট করে ফেলে রেখে গেছে ওই কক্ষে।

এদিকে হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শেখ এ. বি. এম. জাকির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন এবং এ বিষয়ে শনিবার বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৭ নং কক্ষে ল‘ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদুল ইসলাম ও আবু জাফর এবং সমাজ কল্যাণ বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের আকাশ থাকেন। গত জুন মাসের ২৩ তারিখে ঈদের ছুটিতে তারা সবাই গ্রামের বাসায় যায়। সবার শেষে তৌহিদুল কক্ষ ত্যাগ করেন এবং ছুটি শেষে তিনিই সবার আগে ক্যাম্পাসে ফেরেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি কক্ষের তালা খোলার পর দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পান। এতে তার সন্দেহ হলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যকে নিয়ে কক্ষের পিছনে গিয়ে বেলকনির দুইটি গ্রিল কাটা এবং দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পান। পরে হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শেখ এ. বি. এম. জাকির হোসেনকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। ভিতরে প্রবেশের পর ওই শিক্ষার্থী তার ডেক্সটপ খুঁজে পাননা এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র অগোছালো দেখতে পান। এছাড়াও ওই কক্ষে থাকা আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ম্যাগনিফাইং ডিভাইস ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পান তিনি। যা খুবই উচ্চ মূল্যেও এবং দেশের বাহির থেকে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরনের আশ্বাস পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী তৌহিদুল। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে আমরা আমাদের জিনিসপত্র প্রশাসনের আন্ডারে রেখে গেছি। এজন্য এ ঘটনায় আমি অন্য কাউকে দোষী করতে পারছি না। আমি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করবো। প্রশাসন শুধু দেখে গেছে কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো আশ্বাস আমি পাইনি। আর আমার বাকি দুই রুমমেট অনুপস্থিত থাকায় তাদের ক্ষতির পরিমাণটা আমি সঠিক বলতে পারছি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, চুরির বিষয়টি বিকেলে জানতে পেরেছি। ছুটির দিনই প্রভোস্টকে বলেছিলাম আপনার হলের পিছনে তিনটা কক্ষে সিটকিনি লাগানো নেই এবং গ্রিলগুলোও দূর্বল। ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার আগে সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত লাইট এবং হলের চারপাশে পরিষ্কারের জন্য বারবার প্রভোস্টকে জানানোর পরেও তারা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে হলের পেছনে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের বিষয়ে এরআগে কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন ওই হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শেখ এ. বি. এম. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, হলের নানান সমস্যা নিয়ে মিটিং হলেও কেউ পেছনের ঝোপঝাড় পরিষ্কারের বিষয়ে জানায়নি। যেহেতু হলের ওপাশে সাপের ভয় আছে আর জঙ্গলে ভরা সেহেতু ওই পাশ দিয়ে চুরির ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত। আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানিয়েছি। শনিবার অফিস খুললে হলের দায়িত্বরত সবাইকে নিয়ে বসবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিকেলে প্রভোস্ট আমাকে চুরির বিষয়টি জানিয়েছে। ওইসময় আমি দুইজন সহকারী প্রক্টর আর সিকিউরিটি অফিসারের সাথে প্রভোস্টকে কথা বলতে বলেছি। যেহেতু এটা হলের ঘটনা তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে, আমরা সহযোগিতা করবো। শনিবার ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রভোস্টের সাথে আবার কথা বলবো।

তিনি আরো বলেন, হলটির পিছন দিকে আসনারদের যাওয়ার মতো কোনো পরিবেশ নেই। প্রভোস্ট কাউন্সিলকে বারবার বলেছিলাম হলের চারপাশ পরিষ্কার করতে। কিন্তু কয়েকটি হল সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি। বারবার বলার পরেও সিসিটিবি ক্যামেরা জোরদার ও হলের চারপাশ পরিষ্কার করা হচ্ছে না। যার ফলে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আমরাও বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছি।